তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজার :: এবারের নারী দিবসটি এমন সময়ে পালন করা হচ্ছে যখন প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা নারীদের ওপর চলছে ভয়াল নির্যাতন। মিয়ানমারের সেনা, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এবং উগ্র রাখাইনদের হত্যা, ধর্ষণসহ নানামুখী ভয়াল নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গা নারী-শিশুরা পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে বাংলাদেশে। কত নারী হারিয়েছে সম্ভ্রম। কত নারী হারিয়েছে মা-বাবা, স্বামী-সন্তানসহ ঘনিষ্ঠজনকে—সেসবের হিসাব মেলানো কঠিন।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের চিকিৎসা কেন্দ্র ও বস্তিগুলোতে নির্যাতিত নারীদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে আছে। অসংখ্য নারী গণধর্ষণের শিকার হয়ে বাকশক্তি হারিয়েছে। মায়ের সামনে কন্যা হয়েছে ধর্ষণের শিকার। আবার গণধর্ষণের শিকার হয়েছে মা-মেয়ে উভয়েই। হাজার হাজার নির্যাতিত নারী ডুকরে কাঁদছে রোহিঙ্গা শিবিরের ঝুপড়িতে।
রোহিঙ্গা শিবিরে নারীদের নিয়ে কাজ করা জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শিউলী শর্মা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাখাইনে রোহিঙ্গা নারীরা কী ভয়াবহ বর্বরতার শিকার হয়েছেন তা বুঝতে পারছি এখানে কাজ করতে এসে। এখানে আশ্রয় নেওয়া কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারী নির্যাতিত হয়েছে মিয়ানমার বাহিনীর হাতে। ওদেরই একজন আমেনা খাতুন। কুতুপালং ২ নম্বর শিবিরে আশ্রয় পাওয়া এই নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী এখন পুরুষ তো বটেই, এমনকি নারী দেখলেও ভয় পান।’
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের (আরআরআরসি) এক তথ্যে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ১৮ বছর থেকে ৫৯ বছর পর্যন্ত বয়সের নারীর সংখ্যা দুই লাখ দুই হাজার ২৬১ জন। আর ১২ থেকে ১৭ বছরের কিশোরীর সংখ্যা ১৮ হাজার ৬৬০ জন। তবে সরকারি এই কার্যালয়ে নির্যাতিত নারীদের কোনো সঠিক তথ্য নেই।
রাখাইনে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা কিশোরী শফিকা বেগম (১৫) ও রাজুমা বেগম (২০) সবই হারিয়ে ফেলেছে। রবিবার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের এ-ওয়ান ব্লকের বস্তিতে কথা হয় তাদের সঙ্গে। দুজনই রাখাইন রাজ্যের মংডু থানার তুলাতলী গ্রামের বাসিন্দা।
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আরো অসংখ্য নারী আশ্রয় নিয়ে আছে, যাদের দেহ নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত। কিন্তু অনেকেই তা প্রকাশ করে না।সুত্র : কালের কন্ঠ
পাঠকের মতামত: